নেত্রকোণা প্রতিনিধি
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে যৌতুকের টাকা না পেয়ে মৌ (২৫) নামে এক গৃহবধূকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী সাজমুল হোসাইনের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় মৌকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে স্বামী, দেবর, ননদ ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার বাহাম গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত সাজমুল হোসাইন (৩৫) মোহনগঞ্জ উপজেলার বাহাম গ্রামের নুরনবীর ছেলে। ভুক্তভোগী মৌ সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার চৌকিয়াচাপুর গ্রামের জগলু মিয়ার মেয়ে। তাদের সংসারে তিন মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। সাজমুল ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। বিয়ের পর থেকেই পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য মৌয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ শুরু করেন তিনি। দরিদ্র বাবা-মার কাছ থেকে কিছু টাকা এনে দেওয়ার পরও নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
একপর্যায়ে মৌ ঢাকায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে একই পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন এবং উপার্জিত অর্থ স্বামীর হাতে তুলে দিতেন। তবে যৌতুকের জন্য নির্যাতন অব্যাহত থাকে।
সম্প্রতি স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। পাশাপাশি বাড়তে থাকে যৌতুকের চাপ। গত মঙ্গলবার যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। তার চিৎকারে স্থানীয়রা গিয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ভুক্তভোগী মৌ বলেন, “বিয়ের পর থেকেই স্বামী যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়ে আসছে। চাকরির আয়-রোজগারও তার হাতে তুলে দিয়েছি। তারপরও নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তিন মাস বয়সী সন্তানকে রেখে চাকরিতে যেতে পারছিলাম না, সেটাও মেনে নেয়নি। সর্বশেষ আমাকে মারধর করে গুরুতর আহত করেছে।”
তবে অভিযুক্ত সাজমুল হোসাইন মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “মৌ নিজেই নিজের নাকে-মুখে আঘাত করেছে। আমি তাকে মারিনি, যৌতুকও চাইনি।”
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “অভিযোগ তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”