মো:দেলোয়ার হোসেন,
সাভার-আশুলিয়া প্রতিনিধি
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ৩০ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেলে তাকে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া পুলিশ টাউনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার স্ত্রী ফারজানা ব্রাউনিয়া ডিবির গাড়িতে তোলা পর্যন্ত তার সঙ্গে ছিলেন। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে গত ২৮ অক্টোবর সহিংসতার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টাকে দলটির কার্যালয়ে নিয়ে নাশকতায় উস্কানীর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি তিনি। কাল বুধবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্তি কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, পল্টন থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে বিকেলে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরআগে মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টার ঘটনায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন। প্রসঙ্গত, গত রবিবার রাতে মহিউদ্দিন শিকদার নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে রাজধানীর পল্টন থানায় ওই মামলা দায়ের করেন। মামলার দুই নম্বর আসামি হাসান সারওয়ার্দী। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন বাদী। এজাহারে বলা হয়েছে, ২৮ অক্টোবর পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশ উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সারা দেশ থেকে দলটির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। ওই দিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে তারা কাকরাইল মোড় থেকে আরামবাগ মোড় পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। তারা প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনসহ সরকারি স্থাপনা এবং সরকারি গাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করেন। এতে পুলিশের ৪১ সদস্য আহত ও এক সদস্য নিহত হন। এক পর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মহাসমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করেন। এজাহারে আরো বলা হয়, বিএনপির ওই কর্মকাণ্ডের পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে ২০ জন নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে কিছু সংবাদমাধ্যমের সামনে মিয়ান আরেফী নামে এক ব্যক্তি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেন। পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তার সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন বলেও বক্তব্য দেন তিনি। সেখানে মিয়ান আরেফী বক্তব্যে দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দিনে ১০ থেকে ১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। তিনি আরো দাবি করেন, তিনি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, হাসান সারওয়ার্দী এবং ইশরাক হোসেন তাকে মিথ্যা বক্তব্য দিতে সহযোগিতা করেন এবং তার বক্তব্য সমর্থন করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে উস্কানি দেন। আরেফী তাদের সহায়তায় সরকারের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সারা দেশে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। এজাহারে আরো বলা হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনে এক পর্যায়ে মিয়ান আরেফীর বক্তব্য শুনে এবং ভিডিও দেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের মনোবল বাড়াতে আসামিরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী মিয়ান আরেফীর প্রকৃত নাম মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফী। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। সেদিন বিএনপির কার্যালয়ে মিথ্যা পরিচয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার পর গত রবিবার বিকেলে তিনি দেশছাড়ার চেষ্টা করেন। তবে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে ডিবির কাছে হস্তান্তর করে। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।